অনাসিয়া কিসের ঔষধ? এর উপকারিতা ও দাম | Onasia 8 mg

জার্নির সময় বা অপারেশন শেষে বমি হওয়া বা বমি ভাব হওয়া অনেকের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক বিষয়। এই সমস্যার সমাধানে অনাসিয়া (Onasia) একটি প্রভাবশালী বমি নিরোধক ঔষধ। যার সক্রিয় উপাদান হলো Ondansetron। এটি মূলত কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ও সার্জারির পর বমি বা বমি বমি ভাব প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন “অনাসিয়া কিসের ঔষধ?” এই প্রশ্নের উত্তর, উপকারিতা, ডোজ, এবং কিভাবে এটি কাজ করে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

অনাসিয়া কিসের জন্য ব্যবহার হয়?

অনাসিয়া ট্যাবলেট ব্যবহার হয় নিচের পরিস্থিতিতে

  • কেমোথেরাপি দ্বারা সৃষ্ট বমি ও বমি বমি ভাব প্রতিরোধে।
  • রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগীদের বমি নিয়ন্ত্রণে।
  • অপারেশনের পর বমি প্রতিরোধে।
  • গর্ভকালীন কিছু ক্ষেত্রে (যেমনঃ hyperemesis gravidarum), তবে শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে।

ফার্মাকোলজি (অনাসিয়া কীভাবে কাজ করে?)

অনাসিয়া ট্যাবলেট এর সক্রিয় উপাদান Ondansetron কাজ করে মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রের সেরোটোনিন (5-HT₃) রিসেপ্টর ব্লক করে। যখন কেমোথেরাপি বা সার্জারির পর শরীরে সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়। তখন তা বমির সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়। অনাসিয়া এই সংকেত-প্রক্রিয়াকে ব্লক করে বমি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এক কথায়, এটি একটি 5-HT₃ receptor antagonist, যা সেন্ট্রাল ও পারিফেরাল নার্ভ সিস্টেমে কাজ করে।

অনাসিয়া ট্যাবলেটের ডোজ ও সেবনবিধি

অনাসিয়া ট্যাবলেট (Ondansetron ৮ মি.গ্রা) ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ ডোজ নির্ভর করে রোগীর বয়স, ওজন, চিকিৎসার ধরন এবং শারীরিক অবস্থার ওপর। নিচে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ডোজ ও সেবন পদ্ধতি দেওয়া হলো।

কেমোথেরাপি-জনিত বমি ও বমিভাব (CINV)

প্রাপ্তবয়স্ক (Adult):

  • প্রথম ডোজ: কেমোথেরাপির প্রায় ৩০ মিনিট আগে ৮ মি.গ্রা ট্যাবলেট সেবন।
  • পরবর্তী ডোজ: প্রথম ডোজের ৮ ঘণ্টা পর আরও ৮ মি.গ্রা সেবন।
  • পরবর্তী ১-২ দিন: প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা পরপর ৮ মি.গ্রা, সর্বোচ্চ দিনে ৩ বার।

শিশু (৪ থেকে ১১ বছর):

  • প্রথম ডোজ: কেমোথেরাপির আগে ৪ মি.গ্রা
  • পরবর্তী ডোজ: ৪ ও ৮ ঘণ্টা পর আরও দুইটি ৪ মি.গ্রা ডোজ
  • সর্বোচ্চ দৈনিক ডোজ: ১২ মি.গ্রা

নোট: ৪ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে Ondansetron ব্যবহার খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়, শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে।

অপারেশনের পর বমি প্রতিরোধ (PONV)

প্রাপ্তবয়স্ক:

  • সার্জারির প্রায় ১ ঘণ্টা আগে একবারে ১৬ মি.গ্রা (২টি ৮ মি.গ্রা ট্যাবলেট) সেবন।

শিশুদের ক্ষেত্রে:

  • সাধারণত ইনজেকশন ফর্মে দেওয়া হয়, ট্যাবলেট খুব কম ব্যবহৃত হয়। শিশুর ওজন ও বয়স অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করা হয়।

রেডিওথেরাপি-সম্পর্কিত বমি

  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য:
    রেডিওথেরাপির ১-২ ঘণ্টা আগে ৮ মি.গ্রা, দিনে ৩ বার পর্যন্ত।

সেবনের সময় ও নিয়ম

  • ট্যাবলেট সাধারণত খাবারের আগে অথবা নির্ধারিত সময়মতো খেতে হয়।
  • গোটা ট্যাবলেট পানি দিয়ে গিলে ফেলুন, চিবাবেন না বা ভাঙবেন না।
  • নিয়মিত সময়মতো খেলে ওষুধ ভালো কাজ করে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

অতিরিক্ত ডোজ খেলে কী করবেন?

  • যদি একাধিক ট্যাবলেট একসাথে খেয়ে ফেলেন বা ওভারডোজ হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • অতিরিক্ত ডোজে দ্রুত হার্টবিট, মাথা ঘোরা, এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

কখন ডোজ এড়িয়ে যাবেন বা বন্ধ করবেন?

  • যদি অ্যালার্জি লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন: চুলকানি, র‍্যাশ, শ্বাসকষ্ট)
  • যদি হার্টবিট অনিয়ম দেখা দেয়
  • লিভার রোগীদের ক্ষেত্রে ডোজ কমাতে হতে পারে

অনাসিয়া ট্যাবলেট সেবনের সময় অন্যান্য ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, হার্টের ওষুধ, বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ওষুধের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন হতে পারে। তাই চিকিৎসককে সব ওষুধের তালিকা জানান।

সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও অনাসিয়া (Ondansetron) তুলনামূলকভাবে নিরাপদ একটি ঔষধ, তবুও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা মাথায় রাখা জরুরি। নিচে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো তুলনামূলকভাবে হালকা ও অস্থায়ী:

  • মাথা ব্যথা।
  • ঘুম ঘুম ভাব বা ঝিমুনি।
  • হালকা মাথা ঘোরা।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • হালকা বমি বমি ভাব।
  • পেট ফুলে থাকা বা অস্বস্তি।

এগুলো সাধারণত ওষুধের প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে এবং নিজে থেকেই কমে যায়।

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

  • হৃদস্পন্দন অনিয়ম (QT interval prolongation)
    ➤ খুব দ্রুত বা ধীর হার্টবিট, বুকে চাপ বা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন (Anaphylaxis)
    ➤ চুলকানি, র‍্যাশ, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া
  • সিজার বা খিঁচুনি (খুবই বিরল)
  •  রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, দুর্বলতা, ঝিমঝিম ভাব

যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলোর কোনোটি অনুভব করেন, ওষুধ বন্ধ করে জরুরিভাবে চিকিৎসা নিন।

কোন কোন ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?

লিভার ডিজিজ

  • লিভার রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধের নির্গমন ধীর হতে পারে। ফলে ডোজ কমাতে হতে পারে।

হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা

  • QT prolongation হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হার্টের রোগীরা সাবধানে অনাসিয়া গ্রহণ করবেন। ECG মনিটরিং লাগতে পারে।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা

  • প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরি B হওয়ায় তেমন ঝুঁকি দেখা যায় না, তবে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া অনাসিয়া গ্রহণ করা উচিত নয়।
  • স্তন্যদানের সময় ওষুধ দুধে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।

অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন

  • কিছু অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন: erythromycin), antifungal (যেমন: ketoconazole), ও হৃদরোগের ওষুধের (যেমন: amiodarone) সঙ্গে অনাসিয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সংরক্ষণ নির্দেশনা

  • ঠাণ্ডা, শুষ্ক স্থানে রাখুন।
  • ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখুন।
  • শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
  • আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন।

দাম ও প্রাপ্যতা

  • অনাসিয়া ৮ মি.গ্রা ট্যাবলেট: প্রতি ট্যাবলেটের দাম মাত্র ৳১০.০০।
  • ১০ ট্যাবলেটের স্ট্রিপ: ৳১০০.০০।
  • Orion Pharma দ্বারা উৎপাদিত, প্রায় সব ফার্মেসিতেই পাওয়া যায়।

অনাসিয়া কিসের ঔষধ? এটি একটি ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত, নিরাপদ ও কার্যকর বমি নিরোধক ঔষধ যা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং অপারেশনের পর বমি বা বমি বমি ভাব প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এর কার্যকারিতা ও সুরক্ষা প্রোফাইলের কারণে এটি ডাক্তারদের একটি পছন্দের ওষুধ।

আপনার যদি অনাসিয়া নিয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Onasia ৮ মি.গ্রা ট্যাবলেট এর কাজ কি এবং খাওয়ার নিয়ম সহ ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং উপকারীতা। এরকম সকল ঔষধের নাম ও কার্যকারিতা জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য প্রতিবেদনগুলো দেখুন।

Leave a Comment


Math Captcha
7 + 3 =